এই দুই নামের শংকর হচ্ছে নিঝুম মজুমদার। আমাকে অসংখ্য মানুষ মনে করে আমি হিন্দু ধর্মের। আমার কোনো লেখায় রাগ হলেই ফেসবুকের আদার বক্স ভ’রে যায় রেন্ডিয়া, গরুর মূত্র পানকারী, মালা*ন কিংবা আমি কেন ইন্ডিয়ায় আমার মোদী আব্বার কাছে চলে যাই না ইত্যাদি ইত্যাদি।
গত প্রায় ১৩-১৪ বছর ধরে এসব শুনে আসতে আসতে আমি এক ধরনের লাইনে চলে এসেছি। আমাদের লক্ষীপুরের আঞ্চলিক ভাষায় যাকে বলে “থ্যাতা” হয়ে গেছি। এখন আর এসবে কিছুতেই কিছু হয় না।
শুধু নামের শেষে মজুমদার আছে বলে, আমাকে হিন্দু মনে করে যেসব বলা হয়, সেগুলো দেখে আৎকে উঠি। আমি নিজ থেকে কখনো কাউকে শুধরে দেইনা, বলিনা যে আমি একটা মুসলমান পরিবারেই জন্মেছি। কখনো দরকার মনে করিনি।
আজকে বিদ্যানন্দের ঘটনাটা দেখে কিশোর সাহেবের কষ্টটা আমি বুঝতে পারছি।
বিদ্যানন্দ একটি হিন্দু নাম, এই আখ্যা দিয়ে মৌলবাদীরা শুরুতেই কর্ণার করে ফেলতে চেয়েছে। এখন যতসব আজগুবি অভিযোগ দিয়ে মানবতার পক্ষের ফাউন্ডেশনকে শেষ করবার সমস্ত প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। যাকাতের টাকা না পেয়ে কাঠমোল্লাদের মাথা গেছে খারাপ হয়ে।
রোজা এসেছে, প্রচুর ফিতরা কালেক্ট হচ্ছে। সাধারণ মানুষজন বিদ্যানন্দের দিকে ঝুঁকছে, হুজুরদের খুব লসের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। ফলে একটা ধর্মীয় ক্যাচাল জরুরী ছিলো। জগতের কোনো কাজ উদ্দেশ্য ছাড়া হয়না। হতে শুনিনি আসলে।
একাত্তরে সাকা চৌধুরী আর তার বাবা ফকা চৌধুরী নূতন চন্দ্র সিংহ কে খুন এবং তাঁর কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়কে গুড়িয়ে দিয়েছিলো এই বলে যে, এখানে হিন্দুরা বোতলের ভেতর ভাং ভরে মুসলমানদের খাওয়ায়। এখানে মুসলমানদের হিন্দু করার প্রক্রিয়া চলে।
শুধু একাত্তরে যে বলেছে তা নয়, বিচার চলাকালীন সময়ে সাকা চিৎকার করে করে আদালতে বলেছে। আদালত অনেকবার সাকাকে সতর্ক-ও করেছে এর জন্য। সাকা এসব বক্তব্য থামায় নি।
কিন্তু কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের বিরুদ্ধে সাকা আর ফকার ক্রোধের কারন ছিলো অন্য। কারন নূতন চন্দ্র সিংহ সাহেব অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে যাচ্ছিলেন দিনের পর দিন। তাঁর মহানুভবতার জন্য, তাঁর দানশীলতার জন্য। সাকা আর ফকার রাগ ছিলো ঐখানেই।
বিদ্যানন্দ বড় হচ্ছে। তার পত্র-পল্লবিত হচ্ছে, বাড়ছে শাখা, বাড়ছে সৌরভ। বাতাসের ধাক্কা তো লাগবেই। না লাগলেই বরং বিষ্মিত হতাম। এই জনপদে কিরিঞ্চি ও চুলকানি ছাড়া মৌলবাদীদের দিন গুজরান হয়না।
ইতিহাস থেকে আমি জেনেছি, ধর্ম নিয়ে যারা যুদ্ধ বাঁধায় তারা সংখ্যায় সামান্য। আজ বিদ্যানন্দের পক্ষে শত শত মানুষকে আমি দাঁড়িয়ে যেতে দেখছি। মানুষ প্রতিবাদ করে করে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছে। এটা অত্যন্ত আনন্দের।
বিদ্যানন্দ জিতে গেলে জয় আমার নয়, জয় হবে মানবতার। একটা চমৎকার উদ্যোগের